প্রচ্ছদ > অর্থনীতি > শেয়ার ও ব্যাংকিং

চড়া সুদ তবু শিল্পে ঋণ বেড়েছে ২৬ হাজার কোটি টাকা

article-img

দীর্ঘদিন ধরে নির্দিষ্ট ফ্রেমে বাঁধা ছিল ব্যাংকগুলোর বিতরণকৃত ঋণের সুদহার। চলতি বছরের মে মাসের শুরুতে সুদহারের ‘স্মার্ট রেট’ তুলে দিয়ে বাজারভিত্তিক করে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। মূলত আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পরামর্শে স্মার্ট হারের সমাপ্তি ঘটে। তার পর থেকেই বাড়তে থাকে ব্যাংকগুলোর ঋণের সুদহার।

 

অনেক ব্যাংকে ঋণের সুদহার দাঁড়ায় ১৬-১৭ শতাংশ পর্যন্ত। সাধারণত সুদহার বাড়লে ঋণের প্রবণতা কমে যায়। কিন্তু সুদহার বাড়লেও উল্টো বেড়েছে ঋণ বিতরণ প্রবাহ। গত মার্চ-জুন প্রান্তিতে ঋণ বিতরণ বেড়েছে ৩৬ হাজার কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

 

প্রতিবেদন বলছে, জুন শেষে শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্য, ভোক্তা, কৃষি ও পরিবহন খাতে বেড়েছে ঋণ বিতরণ। শুধু কমেছে নির্মাণ খাতে। ২০২৪ সালের মার্চ শেষে ব্যাংক খাতের বিতরণ করা মোট ঋণের পরিমাণ ছিল ১৫ লাখ ৬১ হাজার ২২৭ কোটি ৩২ লাখ টাকা।

 

আর চলতি বছরের জুন শেষে ব্যাংক খাতের বিতরণ করা মোট ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৫ লাখ ৯৭ হাজার ১০১ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। সে হিসাবে ব্যাংক খাতে জুন প্রান্তিকে ঋণ বিতরণ বেশি হয়েছে ৩৫ হাজার ৮৭৪ কোটি ২২ লাখ টাকা। আর বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ঋণ বিতরণে শীর্ষে উঠে এসেছে শিল্প খাত। তথ্য বলছে, চলতি বছরের জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে শিল্প খাতে মোট ঋণ বিতরণ বেড়েছে ২৬ হাজার কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের জুন প্রান্তিকে মৌলিক শিল্প খাতের মধ্যে মেয়াদি ঋণ বিতরণ হয়েছে তিন লাখ ৪৩ হাজার ৩৩৭ কোটি ৬২ লাখ টাকা, যা মোট বিতরণকৃত ঋণের ২১.৫০ শতাংশ।

 

 

আর এর আগে মার্চ প্রান্তিকে বিতরণ করা হয়েছিল তিন লাখ ৩১ হাজার ২৪৬ কোটি ৮০ লাখ টাকা। সে হিসাবে জুন প্রান্তিকে বেশি বিতরণ করা হয়েছে ১২ হাজার ৯০ কোটি ৮২ লাখ টাকা। আর ২০২৪ সালের জুন প্রান্তিকে চলতি মূলধন হিসেবে বিতরণ করা হয়েছে তিন লাখ ২৪ হাজার ৮৯৪ কোটি টাকা, যা মার্চ প্রান্তিকে ছিল তিন লাখ ১০ হাজার ৯৯২ কোটি। সে হিসাবে ঋণ বিতরণ বেড়েছে ১৩ হাজার ৯০২ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে মৌলিক শিল্প খাত ও শিল্পের উপখাতে চলতি মূলধন হিসেবে মোট ঋণ বিতরণ বেড়েছে ২৫ হাজার ৯৯২ কোটি টাকা।

 

আর এককভাবে ঋণ বিতরণে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ব্যবসা ও বাণিজ্য খাত। চলতি বছরের জুন শেষে এ খাতের ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে পাঁচ লাখ ৩২ হাজার ৮৩১ কোটি ৮০ লাখ টাকা, যা মোট ঋণের ৩৩.৩৬ শতাংশ। আর মার্চ শেষে এ খাতে বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ছিল পাঁচ লাখ ২২ হাজার ৫৩২ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। সে হিসাবে জুন প্রান্তিকে বেশি বিতরণ করা হয়েছে ১০ হাজার ২৯৯ কোটি ৩১ লাখ টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৪ সালের জুন শেষে গ্রাহকদের বিভিন্ন পণ্য কেনার বিপরীতে ভোক্তা ঋণ বিতরণও বেড়েছে। জুন শেষে এ খাতে ঋণ বিতরণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে এক লাখ ৩৬ হাজার ৯০৪ কোটি ৪১ লাখ টাকা, যা মোট বিতরণকৃত ঋণের ৮.৫৭ শতাংশ। আর এর আগে মার্চ শেষে এ খাতের বিতরণকৃত ঋণ ছিল এক লাখ ৩৬ হাজার ১০ কোটি টাকা। সেই হিসাবে জুন প্রান্তিকে ভোক্তা ঋণ বেড়েছে ৮৯৬ কোটি ৩১ টাকা।

 

এ ছাড়া জুন প্রান্তিকে কৃষি খাতে বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭২ হাজার ১৭৪ কোটি টাকা, যা মোট বিতরণকৃত ঋণের ৪.৫২ শতাংশ। আর এর আগে মার্চ প্রান্তিকে কৃষি খাতে বিতরণ করা হয়েছিল ৭১ হাজার ৭৯৪ কোটি টাকা। সে হিসাবে জুন প্রান্তিকে কৃষি খাতে বেশি বিতরণ করা হয়েছে ৩৮০ কোটি টাকা। পরিবহন খাতে বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১১ হাজার ৫২৩ কোটি টাকা, যা মোট বিতরণকৃত ঋণের ০.৭২ শতাংশ। আর এর আগে মার্চ প্রান্তিকে পরিবহন খাতে বিতরণ করা হয়েছিল ১১ হাজার ১৬৯ কোটি টাকা। সে হিসাবে জুন প্রান্তিকে এই খাতে ঋণ বিতরণ বেড়েছে ৩৫৪ কোটি টাকা।